হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীতে সাধারনত যদি কোন ব্যক্তি অন্যায়ভাবে জুলুম , নির্যাতন বা হত্যার স্বীকার হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ ঐ লোকটির সন্তান , আত্মীয় স্বজন , অনুসারীগন বা ভক্তগন এই অন্যায় মেনে নিতে পারে না । তৎক্ষনাত তারা বিক্ষোভ , প্রতিবাদ জানাতে থাকে । ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবাদের ভাষা মারাত্মক সহিংস রুপ নেয় । অনেক ক্ষেত্রে ঐ শহরে অনেক ভাংচুর , হত্যাকারীর বাড়ীঘর , যানবাহন , আত্মীয় স্বজনদের জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বা হত্যা করা হয় । বেশীরভাগ ক্ষেত্রে খুনীর পরিবার পালিয়ে যায় । এটা একটা স্বাভাবিক রীতি । সাধারন জনগনও এই বিক্ষোভ প্রতিবাদকে সমর্থন করে ।
এবার দেখুন , সৃষ্টিজগতে এই জাতীয় অদ্ভুত প্রতিবাদের কৌশল দ্বিতীয়টি এখনও পয়দা হয় নাই।
বলছি কারবালার ঘটনা ।
সালাম জানাই , আমার মজলুম ইমামকে (আঃ) ।
ইচ্ছে করলে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসতে পারতেন । যে সৈন্যবাহিনীতে জ্বীন ও ফেরেশতাগন থাকত । মুহূর্তেই ত্রিশ হাজার ঈয়াযীদি বাহিনীকে হস্তী বাহিনীর মত ছাইভস্মে পরিনত করে দিতে পারতেন । ঐ সবের ধাঁরেকাছে গেলেন না ।
কুখ্যাত পতিতা হিন্দার জারজ পুত্র মূয়াবীয়ার অবৈধ সন্তান ঈয়াযীদের বিরুদ্বে একে একে নিজের সন্তান , ভাগ্নে , ভাই , ভাতিজা ও সঙ্গীসাথিদের কুরবানী দিলেন । বাইয়াতের জন্য হাত না দিয়ে নিজের জীবনটা তরবারীর নীচে দিয়ে দিলেন । শুধুমাত্র রাসুলের (সাঃ) রেখে যাওয়া দ্বীনকে কেয়ামত পর্যন্ত বাঁচানোর জন্য ।
ইমাম হোসেন (আঃ) যদি এই পন্থা অনুসরন না করে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ব করে জিতেও যেতেন । সেই যুদ্ব জয়ের কাহিনী মানুষ কয়েক বছরের মধ্যে ভুলে যেত ।
কিন্ত তিনি এমনই এক নজীর সৃষ্টি করে গেলেন যে , গত ১৫০০ বছর যাবৎ দরবারী আলেম দিয়ে শত শত জাল হাদিস , বেদআতি ফতোয়া , শত বোমা-গ্রেনেড মেরেও কারবালার ঘটনা মুছে ফেলতে পারছে না । দিন যত যায় কারবালার ঘটনার স্মরন ততই বাড়ে । দিন যত যায় ইমাম হোসেনের (আঃ) মাজারে কোটি কোটি ভক্তবৃন্দের আগমন ততই বেড়ে চলেছে । মহরম মাস এলেই সারা দুনিয়াতে কারবালার স্মরনে শোক-মাতম-আযাদারি চলছে তো চলছেই ।
" -- তারা আল্লাহর জ্যোতিকে ফু দিয়ে নিভিয়ে ফেলতে চায় । কিন্ত আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ন করবেনই , যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে -- " ।
সুরা - সাফফ / ৮ ।
এই ঘোষনা বা চ্যালেজ্ঞ মহান আল্লাহর নিজেই দিয়েছেন ।
মূল কথায় আসি ।
কারবালার নির্মম জঘন্য পৈচাশিক ঘটনার পরে আজ পর্যন্ত কোন সহিংস জ্বালাও পোড়াও ঘটনা , সাধারন মানুষের জানমালের কোন ক্ষতি হয় নাই ।
ইমাম হোসেনের (আঃ) সমর্থক গোষ্ঠি তখন ছিল ।
এমনকি ইমাম হোসেনের (আঃ) পুত্র চতুর্থ ইমাম হযরত জয়নুল আবেদীন (আঃ) এই ব্যাপারে ওনাদের শীয়াদেরকে উত্তেজিত করেন নাই । যদিও সে পথ খুব সহজ ছিল ।
হিংসার বদলে হিংসা - খুনের বদলে খুন -- এই নীতি গ্রহন করলে তৎকালীন কুফা , শ্যাম শহরে রক্তগঙ্গা বয়ে যেত উভয় সমর্থক গোষ্ঠির হানাহানিতে । এতে ব্যাপক সংখ্যক নিরীহ জনগনের জানমালের বিশাল ক্ষতি হত ।
দয়ালু ইমাম (আঃ) ধ্বংসাত্মক পথের অনুমতি দিলেন না ।
নিজের ছয় মাসের শিশুসহ সমস্ত অত্যাচার-নির্যাতন নিজেই মুখ বুজে সহ্য করে গেলেন ।
নিজের ভক্তবৃন্দ তথা শীয়াদেরকে নির্দেশ দিলেন -
কোন সহিংস জ্বালাও পোড়াও পদ্বতি নয় !
কোন দালানে আগুন নয় !
কোন গাড়ীতে আগুন নয় !
কোন পেট্রোল বোমা নয় !
কোন গ্রেনেড নয় !
কোন হাত বোমা নয় !
মসজিদে ঢুকে মুসল্লীদেরকে আত্মঘাতী বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া নয় !
শান্তিপূর্ন শোকের মিছিলে কোন বোমাবজি নয় !
সুশৃংখলভাবে কালো পোষাক পড়ে নিজের হাত দিয়ে নিজের বুক চাপড়িয়ে , দুঃখের গান গেয়ে শোকের গম্ভীরভাব বজায় রেখে কতৃপক্ষের যথাযথ অনুমতি সাপেক্ষে জগতবাসীকে নিঃশব্দে ঐ দিনের ঘটে যাওয়া দুঃখের ইতিহাসকে পুনরায় স্মরন করিয়ে দাও ।
সম্পূর্ন ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদের ধরন ।
আপনারাই বলুন - মজলুম ইমামের (আঃ) একজন শীয়া - সে নিজের হাত দিয়ে নিজের বুকে মাথা চাপড়াচ্ছে , অপরের নয় নিজের শরীর নিজেই রক্তাক্ত করছে , মাতম , আযাদারী করছে - এতে কার কি বাড়া ভাতে ছাই পড়ল ? কার কি এমন ক্ষতি হল ? বুক চাপড়ায় শীয়ারা - তাহলে ওদের দেহমনে এত জ্বালা-যন্ত্রনা হয় কেন ?
এছাড়া নবীর (সাঃ) আহলে বাইত (আঃ) তো শুধু শীয়াদের একক সম্পত্তি নয় । আহলে বাইতের (আঃ) জন্য যদি অন্য কেউ শোক করে , করুক , সমস্যা তো নাই । শীয়ারা তো এনিয়ে কিছু বলে না !
তাহলে শীয়াদের বেলায় তেনাদের এত ফতোয়া , এত বেদআতি তত্ব আবিস্কার করা হয় কেন ?
শীয়ারা তাদের মত করে শোক প্রকাশ করুক - আপনার এতে গাত্রদাহ হয় কেন মশাই ? কেননা নবীর (সাঃ) আহলে বাইতের (আঃ) শোকে দুঃখিত হওয়া নিশ্চয়ই কোন অপরাধ নয় ।
বিদায় নেওয়ার সময় শক্ত কঠিন একটি কথা বলে যাই ।
কারবালার স্মরনে শোক-ক্রন্দন-মাতমের বিরুদ্বে যারা কথাবার্তা বলে বেড়ায় এবং বাধা সৃষ্টি করে তাদের জন্মের সংক্ষিপ্ত বিবরন ।
স্বামী-স্ত্রীর সহবাস চলাকালীন সময় ঈবলীশ নিজে ঐ সহবাসে অংশ নেয় এবং ঈবলীশ তার বীর্য ঐ স্ত্রীর গর্ভাশয়ের ভিতরে তীব্রগতিতে নিক্ষেপ করে । এরপরে ঐ স্ত্রী গর্ভধারন করে এবং ঈবলীশের বীর্য থেকে জন্ম নেওয়া কুলাঙ্গার সন্তানরা কারবালার স্মরনে শোক-ক্রন্দন-মাতমের বিরুদ্বে কথাবার্তা বলে বেড়ায় । কথা অত্যন্ত পরিস্কার যে , যারা কারবালার স্মরনে শোক-ক্রন্দন-মাতম-আযাদারিকে বেদআত , হারাম বলে ফতোয়া দেয় এবং আযাদারির অনুষ্ঠানে বাঁধা সৃষ্টি করে - বুঝে নিবেন তারা ঈবলীশের বীর্য দ্বারা জন্মেছে ।
লেখাটি শক্ত এবং তেঁতো লাগলেও বাস্তব সত্য এটাই । কারবালার স্মরনে শোক-ক্রন্দন-মাতম-আযাদারির বিরুদ্বে ফতোয়া প্রদানকারী ঈবলীশের বীর্য থেকে পয়দা হওয়া এসব নাজায়েজ ব্যক্তিবর্গের প্রতি আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক ।
লেখা: সাকিল আহমেদ